অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার সামর্থ নেই, মৃত সন্তানের লাশ ব্যাগে ভরে বাড়ি ফিরলেন বাবা
অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার সামর্থ নেই, মৃত সন্তানের লাশ ব্যাগে ভরে বাড়ি ফিরলেন বাবা |
শিউরে ওঠার মতো ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে। টাকার অভাবে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে পারেনি বাবা। তাই পাঁচ মাসের মৃত সন্তানের লাশ ব্যাগে ভরে শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জে নিয়ে আসেন অসহায় বাবা। এই ঘটনা জানাজানি হতেই জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) এক শিশুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন অসীম দেবশর্মার স্ত্রী। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে অন্য শিশুর মৃত্যু হয়।
অসীমবাবু পেশায় একজন পরিযায়ী শ্রমিক। অর্থের অভাবে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনও অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে পারেননি বলে জানান তিনি। এ কারণে রোববার ভোরে মৃত ছেলের লাশ একটি ব্যাগে ভরে বেসরকারি বাসে করে রায়গঞ্জ এসে সেখান থেকে আরেকটি বাসে চেপে কালিয়াগঞ্জে পৌঁছান তিনি।
অসীম দেবশর্মা জানান, 'মৃত ছেলের লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ৮ হাজার রুপি দাবি করে। এমনিতেই চিকিৎসা বাবদ অনেকটা খরচ হয়ে গিয়েছে তার। প্রায় সর্বস্বান্ত। এরপর আর অত রুপি খরচ করে সন্তানের লাশ আনার মতো সামর্থ্য ছিল না হতভাগ্য বাবার। অগত্যা একটি কাঁধের ব্যাগে ছেলের লাশ ভরে নিয়ে বাসে উঠে পড়েন বাবা।
অসীম দেবশর্মা বলেন 'যে অফিসে গাড়ির জন্য লেখালেখি করে সেখানে বললাম কালিয়াগঞ্জ যাব। জানতে চাইল রোগী কে? বললাম রোগী না, আমার সন্তান সে মারা গিয়েছে। আর তা শুনে বলল লাশ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই রুপি লাগবে। সেক্ষেত্রে ৮ হাজার রুপি দাবি করে। তাই শিলিগুড়ি থেকে বাসে উঠে পড়লাম। রায়গঞ্জে নেমে আবার বদলালাম বাস। কাউকে জানাইনি বাসে কী আছে। জানালে বাসে উঠতে দিত না। কালিয়াগঞ্জে বিবেকানন্দ মোড়ে নামার পর গৌরাঙ্গ দাস নামে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন। তাতেই বাড়ি ফিরি।'
বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত গৌরাঙ্গ দাস বলেন, 'এটা খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। ঘটনার খবর পেয়েই কোনও রাজনৈতিকভাবে নয় মানবিকতার খাতিরে একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। অন্তত বাড়ি অবধি মৃত শিশুটিকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে পারে শিশুটির অসহায় বাবা।'
অন্যদিকে এ নিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি নিতাই বৈশ্য বলেন, 'ঘটনাটি খুবই দুঃখদায়ক। তবে পরিবারের লোকেরা আমাদের সঙ্গে যদি যোগাযোগ করতেন আমরা ব্যবস্থা নিতাম।'
No comments